বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য
১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯ খ্রীঃ) বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়া জেলা থেকে বড়ু চণ্ডীদাসের ভণিতায় একখানি পুঁথি আবিষ্কার করেন। এই পুঁথিই ছাপার আকারে বর্তমানে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে প্রচলিত। ‘একরাশ পুঁথির সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বন-বিষ্ণুপুরের সন্নিকট কাঁকিল্যা নিবাসী শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের অধিকারে ছিল। ইঁহারা আপনাদিগকে প্রভুপাদ শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশধর বলিয়া পরিচয় দেন।’১ পুঁথিখানি বসন্তরঞ্জন রায়ের হাতে আসার সাত বছর পর ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়। পুঁথির প্রথম দুখানি এবং শেষের অন্ততঃ একখানি পাতা পাওয়া যায়নি, মধ্যেও কয়েকখানি পাতা নষ্ট হয়ে অথবা হারিয়ে গেছে। অতএব স্বভাবতই বড়ু চণ্ডীদাসের এ গ্রন্থের নাম কী ছিল জানা যায়নি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামটি সম্পাদক প্রদত্ত। নামকরণ সম্পর্কে প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় বসন্তরঞ্জন রায় লেখেন— দীর্ঘকাল যাবৎ চণ্ডীদাস বিরচিত কৃষ্ণকীর্তন-এর অস্তিত্ব মাত্র শুনিয়া আসিতেছিলাম। এতোদিনে তাহার সমাধান হইয়া গেল। আমাদের ধারণা আলোচ্য পুঁথিই কৃষ্ণকীর্তন এবং সেইহেতু উহার অনুকরণ নাম নির্দেশ করা হইল ।
বসন্তবাবুর পূর্বে কৃষ্ণকীর্তনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যে ধারণা প্রচলিত ছিল তার মূল কিন্তু খুব প্রাচীন নয়। ১২৮০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয় জগবন্ধু ভদ্র সম্পাদিত ‘মহাজন পদাবলী’ (১ম খণ্ড)—এই সঙ্কলন-গ্রন্থের ভূমিকাতেই তিনি উল্লেখ করেন যে, চণ্ডীদাসের পদাবলী ছাড়াও ‘কৃষ্ণকীর্তন’ নামে একখানি গ্রন্থও ছিল। জগবন্ধু ভদ্রের এই কথায় প্রতিধ্বনি করেন ব্রজসুন্দর সান্ন্যাল ১৩১১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘চণ্ডীদাস-রচিত’ গ্রন্থে এবং ত্রৈলোক্যনাথ ভট্টাচার্য তাঁর চণ্ডিদাস প্রবন্ধে (নব্যভারত, ফাল্গুন ১৩০০)। কিন্তু জগবন্ধু ভদ্রের কথিত কৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিই যে বসন্তবাবু আবিষ্কার করিয়াছিলেন এমন কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পক্ষান্তরে ডঃ বিজন বিহারী ভট্টাচার্য এবং ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করতে চেয়েছেন গ্রন্থের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ না হয়ে শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ হওয়া উচিত। তাঁরা বসন্তবাবুর আবিষ্কৃত পুঁথির মধ্যে এক টুকরো তুলোট কাগজ পেয়েছেন যার মধ্যে লেখা ছিল—
Reviews
There are no reviews yet.