‘সাত সাগরের মাঝি’ তারই পরিপূরক। এ কাব্যে আরবের মরুময়তা ও বিখ্যাত আরব্য উপন্যাস ‘আলফা ওয়া লায়লা’র প্রাণস্পর্শী চিত্র ফুটে ওঠেছে মনোহরী রূপ নিয়ে। ঐতিহ্য ও আদর্শিকতার এমন সফল সমন্বয় কাব্যজগতে সত্যিই বিরল।এ কাব্যের একটি বিখ্যাত কবিতার নামও ‘সাত সাগরের মাঝি’।
অনন্য সাধারণ এ কবিতার কাহিনী নেয়া হয়েছে আরব্য উপন্যাসের সিন্দাবাদের কাহিনী থেকে। এটি মুসলিম জাগরণ ও ইসলামী রেনেসাঁর প্রতীক। এ কাব্যে সমুদ্র যাত্রাপথে যে বিভিন্ন অনুষঙ্গ উপস্থিত হয়েছে তাদের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। নাবিক সিন্দাবাদ ফেনোত্তল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছাবে অর্থাৎ তার উদ্দিষ্ট স্থানে তথা ‘হেরার রাজতোরণে’ সমবেত হবে।
নাবিক সিন্দাবাদের স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতা তাঁর বিভিন্ন কবিতায় নানারূপে প্রকাশিত হয়ে শেষে মিলিত হয়েছে এক কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে সিন্দাবাদ হলো প্রতীকী নাবিক। যিনি সঠিক পথের দিশা দিবেন। তাই সিন্দাবাদকে সম্বোধন করে কবি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন-
ছিঁড়ে ফেল আজ আয়েশি রাতের মখমল অবসাদ
নতুন পানিতে হাল খুলে দাও, হে মাঝি সিন্দাবাদ
কবি ফররুখ আহমদের ‘সাত সাগরের মাঝি’ শুধু ভাব ও ভাষাতেই নয়, দৃষ্টি এবং শিল্প-নৈপুণ্যেও এর নতুনত্ব আকর্ষণীয়। প্রতিভার ছাপ ফুটে উঠেছে কাব্যটির আগাগোড়ায়। এর সিন্দাবাদ, দরিয়ার শেষ রাত্রি, পাঞ্জেরী প্রভৃতি কবিতায় তিনি বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণের আকাক্সক্ষা পোষণ করেছেন। ‘লাশ’ ও ‘আউলাদ’ কবিতায় যেন দুর্ভিক্ষের বিভীষিকাময় দৃশ্য অমর হয়ে আছে। কবিতা দুটির ভেতর দিয়ে কবি বর্তমান সভ্যতার মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
Reviews
There are no reviews yet.