‘তুজুক-ই-তৈমুরী’ সম্রাট তৈমুর লংয়ের আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিকথা। এই স্মৃতিকথার হিন্দুস্তান অভিযানের অংশই এই গ্রন্থে অনুবাদ করা হয়েছে। তৈমুরের নির্দেশে তৈমুরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিজ্ঞ, জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বারা এই স্মৃতিকথা লিখিত হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনীতে তৈমুরের সাত বছর বয়স থেকে চুয়াত্তর বছরে জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। এমনকি সবশেষে লিখা রয়েছে, “শা’বান মাসের ১৭ তারিখ (১৪০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে মার্চ) আল্লাহর নাম নেবার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি এবং সর্বশক্তিমান ও মহামহিম সৃষ্টিকর্তার হাতে আমার পবিত্র আত্মা সঁপে দেই।” তাঁর নির্দেশ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মূহুর্তের বর্ণনাও যেন তাঁর জবানীতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
‘তুজুক-ই-তৈমুরী’ সম্রাট তৈমুরের আত্মজীবনী চাঘতাই তুর্কী ভাষা থেকে ফার্সী ভাষায় অনুবাদ করে সম্রাট শাহজাহানকে উৎসর্গ করেছিলেন আবু তালেব হোসেইনী। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল শুরু হয়েছিল ১৬২৮ সালে। আবু তালেব ১৬২৮ সাল থেকে ১৬৩৭ সালের মধ্যে এটা ফার্সী ভাষায় অনুবাদ সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু তৈমুরের মৃত্যুর ৩০ বছর পর তাঁর নাতি ইব্রাহীমের পৃষ্ঠপোষকতায় শরফ উদ্দিন ইয়াজদী রচিত ‘জাফর নামা’র সাথে ‘তুজুক-ই-তৈমুরী’র ফার্সী অনুবাদে বেশ কিছু তথ্যগত গড়মিল দেখতে পেয়ে সম্রাট শাহজাহান
এই তুজুকের ফার্সী অনুবাদ নতুন করে করিয়ে নেন। শাহজাহান তাঁর রাজত্বের ১০ম বৎসর ১৬৩৭ সালে এর নতুন অনুবাদ ও সম্পাদনার দায়িত্ব দেন মোহাম্মদ আফজাল বোখারীর উপর।
বোখারীর কৃত সেই অনুবাদ স্যার এইচ ইলিয়ট সংগ্রহ করেন। এর কিছু অংশ ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন তৎকালীন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের সি.ই চ্যাপম্যান এবং বাকী অংশ অনুবাদ করেন প্রফেসর ডাউসন। পুরো ইংরেজি অনুবাদটি সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর ডাউসন।
১৮৭৬ সালে এটি History of India as told by its own historians সিরিজ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। ইংরেজি ভার্সনের বাক্যরীতি, শব্দ চয়ন ইত্যাদী সবই হুবহু বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। যাতে তৈমুরের কথা বলার স্টাইল, তার শব্দ ও বাক্য চয়ন পাঠকরা উপলব্ধি করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, এ গ্রন্থে তৈমুর বক্তা। তিনি দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাট ছিলেন। তিনি হুকুম দিতে এবং হুকুমের তাৎক্ষণিক প্রতিপালন দেখতে পছন্দ করতেন। এ গ্রন্থে তাঁর সেই মানসিকতার প্রতিফলন রয়েছে।
Reviews
There are no reviews yet.